১৪ মার্চ ২০২১ এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষে নারী-উদ্যোক্তাদের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন
১৪ মার্চ ২০২১ এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষে নারী-উদ্যোক্তাদের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি এবং শিল্পসচিব কে এম আলী আজম। এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ মফিজুর রহমান এবং নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার সভাপতি মিসেস মনোয়ারা হাকিম আলী এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস আফরোজা খান।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, দেশে নারী-উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়ায় বাড়ছে নারীর কর্মসংস্থানও। কারণ, নারী নিয়ন্ত্রিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী কর্মীরা বেশি নিয়োগ পান। নারী-উদ্যোক্তাদের নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন পরিচালিত গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, দেশের প্রায় ৫৪% নারী শুধু নিজের চেষ্টা ও আগ্রহে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। তবে নারী-উদ্যোক্তাদের ৮১% এরই ব্যাংক হিসাব না থাকা প্রমাণ করে, তাদের ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা উন্নয়নে নজর দেয়া প্রয়োজন। তার মতে, নারী-উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৬টি বাধার মধ্যে রয়েছে, বড় অংকের ঋণ না পাওয়া, ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা, পণ্য রপ্তানিতে বাধা, নতুন বাজার সম্পর্কে তথ্যের ঘাটতি, নারী-উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দক্ষতার অভাব এবং পরিবার ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের দ্বিমুখী কাজের চাপ। কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে এসব সংকট আরো তীব্র হয়েছে। এসব সংকট সমাধানে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসা, নারী-উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, এসএমই ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা’র মাধ্যমে বিশেষ ঋণ কর্মসূচী চালু, পণ্যের বাজারজাতকরণে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরিসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন রূপকল্পকে এগিয়ে নিতে নারী-উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে ২৮% নারী-উদ্যোক্তাদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। নারী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে করদাতার হারও এই সময়ে ১০% থেকে ৫৬% এ উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ¯œাতক পাস শিক্ষিত নারী-উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়েছে এবং পারিবারিকভাবে নারীদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করার হারও বেড়েছে।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন দেশের নারী-উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে এবং তাদের জন্য টেকসই ও আধুনিক প্রযুক্তি সহায়তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ২০০৮ সাল থেকে ২৫জন নারী-উদ্যোক্তাকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সুবিধাভোগী উদ্যোক্তাদের মধ্যেও ৭০% নারী। ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচীর আওতায় ঋণপ্রাপ্তদের মধ্যে নারী-উদ্যোক্তার হার ২৬%।
শিল্পসচিব বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা-এ দেশের নারী পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টায় রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। আর এভাবেই বিনির্মাণ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা এসএমই ফাউন্ডেশনের অন্যতম অঙ্গীকার। এ লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের অ্যাডভাইজরি সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে নতুন ব্যবসা সৃষ্টি, ঋণ সুবিধা প্রাপ্তি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, পণ্যের বাজার সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা সহায়তা পেয়ে থাকেন। আইসিটি বিষয়ক ই-কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারেও নারী-উদ্যোক্তাদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।