২০ জুন ২০২১
প্রস্তাবিত বাজেট ২০২১-২২ এ ১৪টি এসএমইবান্ধব প্রস্তাবনা গ্রহণ করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা: শিগগিরই আরো কয়েকটি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হবে:
সংবাদ সম্মেলনে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান
প্রেস রিলিজ
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী কর্তৃক প্রস্তাবিত বাজেট ১৪টি এসএমইবান্ধব প্রস্তাবনা গ্রহণ করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তবে বাজেট পাসের আগে বিবেচনার জন্য এসএমইবান্ধব আরো কয়েকটি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিকট পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান। ২০ জুন ২০২১ সকাল ১১টায় অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগের ফলে এসএমই খাতের উন্নয়নের সরকারের নজর আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পক্ষে কোভিড-১৯ এর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সহজতর হচ্ছে। তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের বিশেষ প্রণোদনার প্যাকেজের মধ্যে চলতি জুন মাসের মধ্যে অর্থাৎ দুই মাসেরও কম সময়ে ১০০ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে সক্ষম হবে এসএমই ফাউন্ডেশন।
সংবাদ সম্মেলনে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ মফিজুর রহমান জানান, এসএমই খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে প্রতি অর্থবছরে এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক জাতীয় বাজেটে ট্যাক্স, ভ্যাট, ট্যারিফ ও আর্থিক প্রণোদনা ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা বরাবর উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা বরাবর উপস্থাপিত মোট ৩৯৬টি প্রস্তাবনার মধ্যে ৭১টি সরকার/এনবিআর কর্তৃক গৃহীত হয়েছে এবং জাতীয় বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আরো জানান, এসএমই নীতিমালা-২০১৯ এর কৌশলগত লক্ষ্য ৪.১.৩.২ এ কর কাঠামো সহজীকরণ ও যৌক্তিকীকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রতি অর্থবছরের মত আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এসএমইবান্ধব প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে প্রস্তাাবনা প্রেরণের অনুরোধ জানিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এসএমই অ্যাসোসিয়েশন, ট্রেডবডিজ বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে ১৫টি অ্যাসোসিয়েশন/ট্রেডবডিজ থেকে এসএমই খাত সংশ্লিষ্ট ১০০ এর অধিক প্রস্তাবনা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এসএমই অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেডবডিজ এর প্রতিনিধিদের সাথে ২টি যৌক্তিকীকরণ সভার মাধ্যমে ৬৮টি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রেরণ করা হয়। গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা শেষে দেখা যায়, এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রেরিত প্রস্তাবনাসমূহের মধ্যে নি¤œবর্ণিত ১৪টি সরকার/এনবিআর কর্তৃক আংশিক/সম্পূর্ণরূপে গৃহীত হয়েছে:
১. স্বল্পমূল্যে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য কৃষি খাতের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃষি উপকরণ: উইনার (নিড়ানী) ও উইনোয়ার (ঝাড়াইকল) এর উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৬৭]
২. থ্রেসার মেশিন, পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার, অপারেটেড সিডার, কম্বাইন হারভেস্টার, রোটারী টিলার, উইনার (নিড়ানী) ও উইনোয়ার (ঝাড়াইকল) ইত্যাদির উপর আমদানি পর্যায়ে আগাম কর অব্যাহতি [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৬৭]
৩. নন-লিস্টেড কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে কর্পোরেট কর হার ৩২.৫% থেকে হ্রাস করে ৩০% করা [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৩৭]
৪. দেশে উৎপাদিত সকল প্রকার ফল ও শাক-সবজি প্রসেসিং শিল্প ও কৃষিযন্ত্র উৎপাদনকারী শিল্পের জন্য দশ বছরের করমুক্ত সুবিধা [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৫১]
৫. বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের শিল্পের কাঁচামাল/উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর ৪% থেকে হ্রাস করে ৩ শতাংশ করা [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৬০]
৬. হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের পণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে শর্ত সাপেক্ষে দশ বছর মেয়াদী কর অব্যাহতি [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৫০] (পৃষ্ঠা-১৩১)
৭. হাল্কা প্রকৌশল শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের বিধান সহজীকরণ [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৬৮]
৮. স্পিনিং মিলে ব্যবহৃত পেপার কোনের উপর বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর ১৫% থেকে কমিয়ে ৫% করা [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৬৮]
৯. কৃষি আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃষি উপকরণ আমদনিতে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন সুসংহত করতে সুরক্ষা প্রদান করা [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৭৯]
১০. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিরক্ষণে এসএমই কর্তৃক তৈরিকৃত কিছু পণ্য (Finished Product) আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ক কর বৃদ্ধি [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৮৬]
১১. মুড়ির স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৬৫]
১২. এসএমই খাত এবং নারীর উন্নয়নে এসএমই খাতের নারী-উদ্যোক্তাগণের জন্য বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে ব্যবসায়ের মোট টার্নওভারের ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা। উল্লেখ্য, এর ফলে নারী-উদ্যোক্তাগণ ও এসএমই খাত উভয়ই উপকৃত হবে। [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৪৯]
১৩. কাগজ শিল্পের কাঁচামাল (coated paper) আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান [বাজেট বক্তব্য-অনুচ্ছেদ-২৮৬]
১৪. মোটরসাইকেল শিল্পের কিছু যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান।
সংবাদ সম্মেলনে ড. মো মফিজুর রহমান আরো বলেন, এমএসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে নি¤œবর্ণিত আরো কিছু বিষয় সরকার বিবেচনা করতে পারে:
১. বর্তমানে বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা হতে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ৪% হারে টার্নওভার কর নির্ধারণ করা আছে। এসএমই খাতের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য টার্নওভার কর হার কমানো প্রয়োজন।
২. বর্তমোনে এসএমই খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের কর অবকাশ সুবিধা নেই। এসএমই খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে ।
৩. বর্তমানে এসএমইসহ সকল রপ্তানিকারক শিল্পের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স ৩৫% হারে প্রযোজ্য। যদিও তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর নিম্নতর হার নির্ধারণ করা আছে। এসএমই রপ্তানিকারকদের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স আরো কিছটা হ্রাস করা যেতে পারে।
৪. এমএসএমই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য রপ্তানির বিপরীতে ন্যুনতম ২০% হারে নগদ সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে।
৫. সরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বা সেবা এমএসএমইদেও থেকে ক্রয় নিশ্চিতকরণ এবং এমএসএমইদের থেকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বা সেবা ক্রয়ের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে প্রেরিত এসএমইবান্ধব প্রস্তাবনাসমূহের মধ্যে ২০১২-১৩ এ ১০টি, ২০১৩-১৪ এ ৩টি, ২০১৪-১৫ এ ৭টি, ২০১৫-১৬ এ ৫টি, ২০১৬-১৭ এ ১০টি, ২০১৭-১৮ এ ৭টি, ২০১৮-১৯ এ ৪টি, ২০১৯-২০ এ ৬টি, ২০২০-২১ এ ৫টি এবং ২০২১-২২ এ ১৪টি প্রস্তাাবনা গৃহীত হয়।
আগামী অর্থ বছরের জন্য আরো কয়েকটি প্রস্তাব বিচেনার জন্য পুন:রায় প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে এবং সেগুলি ২/১ দিনের মধ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিকট প্রেরণ করা হবে।