০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এসএমই ফাউন্ডেশন এবং আইএলও (ILO) বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে অগ্রাধিকার নির্ধারণে জাতীয় অংশীজন পরামর্শ সভা ও নীতি সংলাপ’-এর সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. এহছানে এলাহী এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্য প্রদান করবেন আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর Toumo Poutiainen। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএলও বাংলাদেশের এসএমই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ Gunjan Dallakoti এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এশিয়ার প্রায় সব দেশে সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে একক সংস্থা থাকলেও বাংলাদেশে ভিন্ন সংস্থা থাকায় সমন্বয়হীনতার কারণে প্রয়োজনীয় সেবা পান না উদ্যোক্তারা। এজন্য সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, অনুমোদন কর প্রদান একই প্রতিষ্ঠান থেকে হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা উন্নয়ন সেবা, অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, বাজারজাতকরণসহ সব সেবা নিশ্চিত করতে ওয়ান স্টপ এসএমই হেল্পডেস্ক গঠন করা দরকার। রপ্তানি সম্ভাবনাময় এসএমই ক্লাস্টারসমূহে মান নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানে কমন ফ্যাসিলিট সেন্টার এবং আলাদা সিএমএসএমই রপ্তানি উন্নয়ন সংস্থা গঠনেরও পরামর্শ দেয়া হয় সেমিনারে।
শিল্পমন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বলেন, বাংলাদেশের মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯০ ভাগের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি। গ্রাম পর্যায়ে শতকরা ৬৪ ভাগের বেশি প্রতিষ্ঠান অকৃষি খাতের। শিল্প খাতের কর্মসংস্থানের ৮৫ ভাগ সিএমএসএমই খাতের অবদান এবং অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান শতকরা ২৫ ভাগ। কোভিড ১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের এসএমই উদ্যোক্তারাও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এসএমই ফাউন্ডেশনসহ সরকার তাদেরকে সহায়তার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, দেশব্যাপী শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র দূরীকরণে এসএমই খাতের অবদান অনস্বীকার্য। সরকারের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসএমইকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ফলে দেশে এসএমই উন্নয়নে উপযোগী পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এসএমই খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশে সরকারের নীতি সহায়তা এবং প্রণোদনা প্রধান নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখে। এসডিজির বাস্তবায়নসহ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এসএমই খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য দরকার যুগপোযোগী ও কার্যকরী এসএমই উন্নয়ন নীতিমালা, কর্মসূচি ও প্রণোদনা। এছাড়া, কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রেক্ষাপটসহ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাম্প্রতিক বৈদেশিক মুদ্রাজনিত চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি কারণে দেশের এসএমই খাত যে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার সন্মুখীন হয়েছে, সরকারের অনুকূল নীতি সহায়তা ব্যতিরেকে এ অবস্থা হতে আশু উত্তরণ সম্ভব নয় মর্মে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এসব বিষয় বিবেচনা করে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং আইএলও (ILO) বাংলাদেশ যৌথভাবে National Stakeholder Consultation and Policy Dialogue on Priorities for SME Development in Bangladesh অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির আওতায় প্রথমদিন ৩১ আগস্ট ২০২৩ বৃহস্পতিবার স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন এবং দ্বিতীয় দিন ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রবিবার উক্ত স্টেকহোল্ডার্স কনসালটেশন হতে প্রাপ্ত সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত খসড়া কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়, যা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। কর্মসূচিতে এসএমই এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন সহযোগি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।