এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) ড. মো. সিরাজুল ইসলাম এবং প্রাণ-আরএফএল-এর পরিচালক উজমা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান এবং FES Bangladesh-এর আবাসিক প্রতিনিধি Felix Kolbitz। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশন স্ট্রাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শরীয়ত উল্লাহ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ/পেপার উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উন্নত দেশসমূহ এরই মধ্যে গবেষণা, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে এসএমই খাতের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে যোগাযোগের অভাবে তা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটাতে পারেনি। ফলে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি শিল্প মালিকদের যেমন আস্থা কমছে, তেমনি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ১১ হাজার ১৬০টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ মাস থেকে ৪ বছর মেয়াদী বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। তবে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র ২০২০-২১ অর্থবছরের তথ্য বলছে, বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশীদের শতকরা ৭০ ভাগই সাধারণ শ্রমিক, ৫ ভাগের বেশি নির্মাণ শ্রমিক আর অন্যান্য পেশায় আছেন ২৫ ভাগের মতো। আর কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানেরও চাহিদা মেটাতে না পারার ১০টি কারণ উল্লেখ করা হয় সেমিনারে:
১. শিল্প খাতের চাহিদা বিবেচনা করে বেশিরভাগ কারিগরি শিক্ষা একই বিষয়ে প্রশিক্ষণ;
২. শিক্ষানবীশ পদ্ধতি না থাকা এবং এই পেশার সামাজিক স্বীকৃতি অভাব;
৩. যোগ্য প্রশিক্ষক সংকট;
৪. মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব;
৫. কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরোনো প্রযুক্তি;
৬. শিল্প ও কারিগরি শিক্ষা খাতের মাঝে যোগাযোগের অভাব;
৭. নারীর অংশগ্রহণ কম;
৮. কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত বৈশ্বিক স্বীকৃতির অভাব;
৯. বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো এবং মজুরির মানের মাঝে সমন্বয়হীনতা; এবং
১০. কারিগরি শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের অবস্থানের দূরত্ব।
সমস্যা সমাধানে শিল্প ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে যোগাযোগ বাড়াতে শিক্ষানবীশ পদ্ধতি কার্যকর পরামর্শ দেয়া হয় সেমিনারে। এক্ষেত্রে ৭ম ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দক্ষতা উন্নয়ন কৌশল, বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২২, শিক্ষানবীশ গাইডলাইন ২০২২, বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২২-২৭ এবং জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিলের নির্দেশনা কার্যকরের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অনুষ্ঠানে দেশের টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, এসএমই উদ্যোক্তা, চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন এসএমই খাত ও উপখাত সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন, কার্যকর কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য এসএমই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ফাউন্ডেশন বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেমিনার/কর্মশালা আয়োজন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এসএমই ফাউন্ডেশন এবং FES Bangladesh-এর যৌথ উদ্যোগে এই স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।