মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) খাতের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে এখাতের অবদান সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ২৭ জুনকে ‘আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রতি বছর এই দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদযাপন করা হয়। ২০২৪ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘Leveraging the Power and Resilience of Micro-, Small and Medium-sized Enterprises (MSMEs) to Accelerate Sustainable Development and Eradicate Poverty in Times of Multiple Crise ‘। বাংলাদেশের এসএমই খাত উন্নয়নের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই ফাউন্ডেশন) মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহায়তায় ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিবস উদযাপন করে থাকে। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় ২৭ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২৪’ উদযাপন করা হয়। সকালে আগারগাঁওয়ে বেলুন উড়িয়ে দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সালাহউদ্দিন মাহমুদ। সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং আন্তর্জাতিক শ্র্রম সংস্থা (আইএলও)-এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠান এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসার প্রসারে প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা উদ্বোধন করা হয়। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক এবং শিল্প মন্ত্রণালয়েরর অতিরিক্ত সচিব জনাব এস এম আলম, আইএলও, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর Toumo Poutiainen। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সালাহউদ্দিন মাহমুদ।
আইএলও বাংলাদেশ এসএমই উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে জেন্ডার অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ টুগেদার বা গেট অ্যাহেড কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রকাশিত গেট অ্যাহেড প্রশিক্ষণ নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী নারীদের কাজের সুযোগ সীমিত হওয়ায় প্রতি বছর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো ৪২ থেকে ৪৬ বিলিয়র ডলার আয় থেকে বঞ্চিত হয়। তাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরু ও বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে সহায়তার লক্ষ্যে আইএলও’র সহায়তায় গেট অ্যাহেড প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, পারস্পরিক সহযোগিতামূলক এবং হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি করে ব্যবসায় অধিকতর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। তবে পুরুষ উদ্যোক্তাদের হাতেও তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের হাজার হাজার নারী-উদ্যোক্তা এবং সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার কাছে এই প্রশিক্ষণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ৭৮ লাখের বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৯%-এর বেশি। এ খাত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫% এসএমই খাতে। এই খাতে প্রায় ২.১ কোটি জনবল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত আছে। অধিক জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। এমএসএমই একটি শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর খাত। উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এমএসএমই অবদান অনেক। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও সিএমএসএমই খাতের বিকাশ ও উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে এসএমই অনুঘটকের ভূমিকা রাখছে। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে এসএমই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন সরকারের জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, নির্বাচনা ইশতেহার ২০২৪, এসডিজি ২০৩০ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।