২৭ জুন ২০২১, রবিবার ‘আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে এসএমই ফাউন্ডেশন ও UNIDO- এর যৌথ উদ্যোগে অনলাইন প্লাটফর্মে আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন
প্রেস রিলিজ
এমএসএমই দিবস ২০২১ উদযাপন:
এসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ৫ বছর মেয়াদী কৌশলগত উন্নয়ন রূপকল্প তৈরি করছে এসএমই ফাউন্ডেশন: ২ মাসেরও কম সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজের ১০০ কোটি টাকা বিতরণ: এসএমই খাতের উন্নয়নে প্রতি বছর বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ প্রয়োজন: ওয়েবিনারে বক্তারা
আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এসএমই ফাউন্ডেশন এবং UNIDO’র যৌথ উদ্যোগে ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে আরো এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে জাতিসংঘ ২৭ জুনকে ‘এমএসএমই দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই হিসাবে এ বছর সারা বিশ্বে পঞ্চমবারের মত দিবসটি পালিত হচ্ছে। ২০২১ সালে এমএসএমই দিবসের প্রতিপাদ্য "MSMEs: Key to an inclusive and sustainable recovery"। এসএমই ফাউন্ডেশন প্রথমবারের মত আনুষ্ঠানিকভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘এমএসএমই দিবস’ উদযাপনের উদ্যোগ নেয়। এ উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা এবং নানা আয়োজনের মাধ্যমে এমএসএমই দিবস পালন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ২৭ জুন ২০২১ এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন UNIDO’র Regional Representative for South Asia Mr. Van Berkel Rene।
স্বাগত বক্তৃতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, এসএমই কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে এসএমই উদ্যোক্তাদের ক্ষতি কাটিয়ে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে এ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকা বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তিনি আরো জানান, আগামী অর্থবছরের জন্য এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের ৫ বছর মেয়াদী (২০২১-২৫) কৌশলগত উন্নয়ন রূপকল্প তৈরি, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২০০ কোটি টাকা বিতরণ, ১টি জাতীয় এবং বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ১৬টি আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন, নতুন উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দু’টি বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা, দক্ষতা উন্নয়নে অন্তত ৫ হাজার উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, অনলাইন মার্কেটিংয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান, এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য অনলাইন প্রোডাক্ট ডিসপ্লে প্ল্যাটফর্ম, নারী-উদ্যোক্তা ও ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্য ঠিক করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তবে এসএমই ফাউন্ডেশন মনে করে, দেশের মোট অর্থনীতির চার ভাগের এক ভাগ এসএমই খাতের উন্নয়ন এবং এসএমই নীতিমালা ২০১৯ বাস্তবায়নে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে কার্যালয় স্থাপন, ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রম, এসএমই উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে প্রতি বছর বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনকে একটি কার্যকর ও স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করাই হলো এম্এসএমই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বলেন, দেশের এমএসএমই উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সারা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন, বাজার সংযোগ সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসব উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে দেশের উদ্যোক্তাদের পণ্য সারা বিশ্ব জয় করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ এর মধ্যেও দেশের প্রত্যন্ত পাড়ায়, গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করছেন। এখন দরকার তাদের দক্ষতা উন্নয়ন। এসএমই ফাউন্ডেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম দেশে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়াস আরো জোরদার করবে বলেও মনে করেন তিনি। এসএমই ফাউন্ডেশনকে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার বিষয়েও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫%। এসএমই নীতিমালা ২০১৯ এ ২০২৪ সালের এসএমই খাতের অবদান ৩২% এ উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেশের ৭৮ লাখ ১৩ হাজারের অধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বা সিএমএসএমই। অর্থনীতিতে এমএসএমই খাতের অবদান আরো বৃদ্ধি করতে এবং তাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এমএসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমসমূহ সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নকে গতিশীল করবে বলেও মনে করেন তিনি। এ লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান শিল্প প্রতিমন্ত্রী।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ এখন চাকরি খুঁজছে না, নিজেরাই চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোক্তা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১০ সালে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলেছিলেন প্রত্যন্ত দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে। বর্তমানে ৭০০০ ডিজিটাল সেন্টারে ১৩ হাজার উদ্যোক্তা কাজ করছে। আইসিটি খাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান তৈরির করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি। জনাব পলক, ডিজিটাল সেবা গ্রহনের মাধ্যমে আরো বেশি বেশি উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ আখতার হোসেন বলেন, দেশব্যাপী টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের দ্রুত প্রসার ঘটছে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, যুব উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অনেক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এগিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমার বিশ্বাস, দেশে যুব সমাজের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং এসএমই ফাউন্ডেশন এক সাথে কাজ করতে পারে।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে এবং এসএমই উদ্যোক্তাগণ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের পর থেকে দুই এক বছরের বেশি সময়ে এসএমই উদ্যোক্তাগণ কাঁচামাল সরবরাহ, পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ, কর্মচারীদের বেতন ভাতা, ব্যবসায় অর্থায়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে সরকার কর্তৃক সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য দুই দফা আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সহযোগিতায় উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। এসএমই ফাউন্ডেশনকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের পরিণত করার যে কোন উদ্যোগের মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশ্বস্থ্য করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক না থাকায় সরকারের প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এসএমই উদ্যোক্তারা। তাই এ শিল্পের জন্য বিকল্প অর্থায়নের ব্যবস্থা করা দরকার। অর্থনৈতিক অঞ্চলে এসএমই-এর জন্য আলাদা জায়গায় ইউটিলিটি বরাদ্দ থাকতে হবে। এছাড়া এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিতরণের আহবান জানান তিনি।
UNIDO’র Regional Representative for South Asia Mr. Van Berkel Rene তার উপস্থাপনায় বাংলাদেশ এবং সাউথ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এসএমই খাতের তুলানামূলক চিত্র উপস্থাপন করে বলেন এসএমই খাত ভাল পারফর্ম করায় বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ খুব ভাল। তিনি ভবিষ্যতে এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আশ্বাস প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের শিল্প খাতে উন্নয়নের শুরুটা হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। আর এসএমই খাতে উন্নয়নের ধারা চলমান তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ১৯৫৬ সালে বাণিজ্য, শিল্প, শ্রম, দুর্নীতি দমন এবং গ্রাম সহায়তা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও শিল্প কর্পোরেশন (ইপসিক) প্রতিষ্ঠা করেন, স্বাধীনতার পর থেকে যা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এ পরিণত হয় এবং সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি আরো বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, অর্থায়ন, বাজার সংযোগ সৃষ্টিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সরকারের দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকা ২৪ জুনের মধ্যে বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে কার্যক্রম আরো বাড়াতে জনবল ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রাজস্ব বাজেট থেকে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ প্রয়োজন।