১৮ আগস্ট ২০২৩ পণ্যের মানোন্নয়নে স্বল্প খরচে উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তির সেবা দিতে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজশাহীর কালুহাটি পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ক্লাস্টারভিত্তিক কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব মো. শাহরিয়ার আলম এমপি।
পণ্যের মানোন্নয়নে স্বল্প খরচে উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তির সেবা দিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রাজশাহীর কালুহাটি পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারে কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ১৮ আগস্ট ২০২৩ রাজশাহীর কালুহাটি পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম আলম, ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদ সদস্য মির্জা নূরুল গণী শোভন, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অসীম কুমার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন।
শিল্প ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজশাহীর কালুহাটি পাদুকা ক্লাস্টারে ১৩টি অত্যাধুনিক মেশিনসহ কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, বহুমুখী পণ্যের উৎপাদন, উৎপাদন হার বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক ব্যবসায়িক উন্নয়নই কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপনের মূল লক্ষ্য। কালুহাটি পাদুকা ক্লাস্টারে সিএফসি কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলে অন্যান্য ক্লাস্টারেও অনুরূপ কার্যক্রম গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের। রাজশাহীর চারঘাটের কালুহাটি গ্রামে আশির দশকে গড়ে ওঠা পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারে চামড়া ও রেক্সিনের জুতা এবং স্যান্ডেল উৎপাদিত হয়। ক্লাস্টারটিতে প্রায় ৭ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান। এসএমই ফাউন্ডেশন কালুহাটি পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারে নিয়মিত নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, বহুমুখী পণ্য উৎপাদন, মার্কেটিং, আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে ১৫টি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ক্রেডিট হোলসেলিং কার্যক্রমের আওতায় ক্লাস্টারের ৮৫জন উদ্যোক্তার মাঝে ৩ ধাপে সহজ শর্তে প্রায় ২.৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ক্লাস্টারের পণ্যের প্রচার-প্রসার ও ক্রেতাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন কালুহাটি পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের নিয়ে সমজাতীয় ক্লাস্টারে এক্সপোজার ভিজিট আয়োজনসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক মেলায় অংশগ্রহনের সুযোগ প্রদান করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। কালুহাটিতে সিএফসি স্থাপন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বিক সহায়তা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী । প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে সিএফসি পরিচালনার জন্য বিদ্যুত সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার সেন্টার (সিএফসি) এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসএমই ফাউন্ডেশন ও কালুহাটি পাদুকা শিল্প মালিক সমবায় সমিতির সমন্বয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে।
উল্লেখ্য, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে তৃণমূল, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে পরিচালিত স্টাডিতে দেশব্যাপী ১৭৭টি ক্লাস্টার (বুস্টার সেক্টরে ১২৯ টি ও নন-বুস্টার সেক্টরে ৪৮টি) চিহ্নিত করা হয় যেখানে কর্মী ও শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এসব ক্লাস্টারের ৭০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক টার্নওভার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। চিহ্নিত ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, হ্যান্ডলুম, নকশিকাঁথা, ক্ষুদ্র গার্মেন্টস, হ্যান্ডিক্রাফটস, চামড়াজাত পণ্য ক্লাস্টার উল্লেখযোগ্য।
জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ (অনুচ্ছেদ-৩.৬) এ শিল্প ক্লাস্টারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,
‘৫ (পাঁচ) কিলোমিটার ব্যাসার্ধের ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত ৫০টি বা ততোধিক উৎপাদন বা সেবা খাতভুক্ত কুটির/মাইক্রো/ক্ষুদ্র/মাঝারি/বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি একই বা সমজাতীয় পণ্য বা সেবা উৎপাদন করে বা ব্যাকওয়ার্ড ফরওয়ার্ড লিঙ্কেজ তৈরির মাধ্যমে সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করে তবে ঐ এলাকাটিকে ক্লাস্টার হিসেবে গণ্য করা হবে’।
ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকা-ের অংশ হিসেবে এসএমই ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্লাস্টারসমূহের উন্নয়ন চাহিদা নিরূপন করে চাহিদাভিত্তক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে ৯০ টি ক্লাস্টারে উন্নয়ন চাহিদা নিরূপণ কার্যক্রম পরিচালনা সম্পন্ন করা হয়েছে এবং ফাউন্ডেশন ৪০টি ক্লাস্টারে প্রতিনিয়ত নানাবিধ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ক্লাস্টার উদ্যোক্তা ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০টি ক্লাস্টারের প্রায় ৩০০০ উদ্যোক্তার তথ্য সম্বলিত ‘এসএমই ক্লাস্টার ডিরেক্টরি’ প্রকাশ করা হয়েছে। ক্লাস্টারে উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও দেশে-বিদেশে বাজার সম্প্রসারণে ক্লাস্টারভিত্তিক ওয়েবসাইট তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও ক্লাস্টারভিত্তিক অর্থায়নে নির্দেশনা প্রদান করেছে। ক্লাস্টারসমূহে পণ্যের ডিজাইন আধুনিকীকরণ ও পণ্য বহুমুখীকরণ, উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্লাস্টার উন্নয়নে পলিসিগত সীমাবদ্ধতা নিরসন, ক্লাস্টারে উৎপাদিত পণ্যের মার্কেট-লিঙ্কেজ, ক্লাস্টার ফাইন্যান্সিং, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন এবং কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মডেল ক্লাস্টারে উন্নীতকরণ ও এসএমই নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৪০টি বিভিন্ন ক্লাস্টারের ৪,৮০০ উদ্যোক্তাকে পণ্যের ডিজাইন উন্নয়ন, পণ্য বৈচিত্র্য, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, বিপণন দক্ষতা, অ্যাকাউন্টিং, অনলাইন বিপণন, ভ্যাট-ট্যাক্স, হিট এবং সার্ফেস ট্রিটমেন্ট, ফাউন্ড্রি, অগ্নি নিরাপত্তাসহ ক্লাস্টার-ভিত্তিক এসএমই উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রায় ১৬০টি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেল প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উৎপাদনভিত্তিক এবং পরিসেবা-ভিত্তিক ২৮০০ ক্লাস্টার উদ্যোক্তার মাঝে ১৮৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্লাস্টার উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন শিল্প ক্লাস্টারের উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং বাজার সংহতকরণে আধুনিক প্রযুক্তি এবং আইটি সহায়তা প্রদান করে । আইটি-সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ওয়েবসাইট তৈরি করা এই বিষয়ে মূল কার্যক্রমগুলির মধ্যে অন্যতম।