৩১ জুলাই ২০২৩ উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ‘কাইজেন’ বাস্তবায়নকারী এসএমই প্রতিষ্ঠানসমূহকে সনদ প্রদান এবং চলতি অর্থবছরে ‘এসএমইতে কাইজেন’ কর্মসূচি’র উদ্বোধন।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের মানোন্নয়নে ‘কাইজেন’ বাস্তবায়নে ৬২টি প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় চারশ’ উদ্যোক্তাকে সহায়তা করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি প্রায় ১২০০ উদ্যোক্তার মাঝে ‘কাইজেন’ বাস্তবায়নে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ৩১ জুলাই ২০২৩ রাজধানীর আগারগাঁও পর্যটন ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মাসুদ, আইপিই বিভাগ এবং এনপিও মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), মুহম্মদ মেসবাহুল আলম। অনুষ্ঠানে ‘এসএমই উন্নয়নে উৎপাদনশীলতা’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনপিও ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফুজ্জামান এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বড় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতা কমিশনের সাথে আলোচনা করবে এসএমই ফাউন্ডেশন। সেই সাথে এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণপত্র না এলসি খোলার ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘কাইজেন ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্প’ সম্পন্নকারী এসএমই প্রতিষ্ঠানকে সনদ প্রদান করা হয় এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ‘এসএমই-তে কাইজেন’ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উল্লেখ্য, পণ্যের মানোন্নয়ন ও সার্বিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দ্বারা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে একটি সার্বজনীন কৌশল হচ্ছে কাইজেন (KAIZEN)। কাইজেন শব্দটি দুটি জাপানি শব্দ Kai (অর্থ-‘পরিবর্তন’) এবং Zen (অর্থ-‘ভালো’) এর সংমিশ্রণে উৎপন্ন, যার অর্থ ‘ভালোর জন্য পরিবর্তন’। এটি এমন একটি অনুশীলন যা শুন্য ব্যয়ে যে কোনো কার্যক্রমের ধারাবাহিক উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করে। শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশাসন, দৈনন্দিন জীবনযাপনসহ সকল ক্ষেত্রেই কাইজেন অনুসরণ করা যেতে পারে। এটি বাস্তবায়নের ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও অপচয় রোধ সম্ভব। ‘কাইজেন’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিম্নোক্ত ধাপসমূহ অনুসরণ করা হয়- (ক) সচেতনতা উন্নয়ন, (খ) প্রশিক্ষক উন্নয়ন (টিওটি), (গ) প্রতিষ্ঠান বাছাই ও নিশ্চিতকরণ, (ঘ) উৎপাদনশীলতা নিরীক্ষণ, (ঙ) কাইজেন পাইলট প্রকল্প প্রণয়ন, (চ) দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ (ইন-প্ল্যান্ট), (ছ) প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ, (জ) চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন, এবং (ঝ) উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম। এই উদ্দেশ্যে কাইজেন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ প্রদান করে এসএমই ফাউন্ডেশন। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ‘এসএমই-তে কাইজেন’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১,২০০ জনের সচেতনতা সৃষ্টি, ৩৯০জনের দক্ষতা উন্নয়ন, ৬২টি এসএমই প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। চলতি অর্থবছরেও ১০টি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, হালকা প্রকৌশল, প্লাস্টিক, চামড়াজাত, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স, তৈরি পোশাক ও হস্তশিল্প, পাটজাতসহ বিভিন্ন শিল্পের উদ্যোক্তা, প্রতিনিধি ও অংশীজন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা ও কলাকৌশল, বৈশ্বিক উৎপাদনশীলতা পরিস্থিতি ও করণীয় এবং এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়।